বাংলাদেশের ধর্মীয় ও আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে নিম্নবিত্ত পরিবারে তো বটেই, উচ্চবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়েরাও শ্বশুরবাড়ীতে প্রতিনিয়ত শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতিত হয়। তার প্রমাণ আমরা প্রতিদিন পাই নানা গণমাধ্যমে ও গবেষণা প্রতিবেদনে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যমতে, এদেশে ৮০% নারী তার নিজ ঘরে তার অতি আপন জন দ্বারা, বিশেষ করে তার স্বামীর দ্বারা নির্যাতিত। কখনও কখনও তারা খুন হয়, কখনও স্বামী তাকে (অধিকাংশ সময় সন্তানসহ) ছেড়ে চলে যায় বা তালাক দেয়।
মেয়েদের প্রতি হওয়া নির্যাতন সহ্য করার কারণ কী?
শতকরা আশি ভাগ ক্ষেত্রে পারিবারিক কলহের কারণ আর্থিক। অভাবে স্বভাব নষ্ট। প্রয়োজনের তুলনায় আর্থিক সঙ্গতি কম হলে সব সম্পর্কে তার নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। ফলে সংসারে অশান্তি হয়। আর্থিক সংকট, যৌতুক আদায়, পরকীয়া, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বোঝাপড়ার অভাব, নানা পারিবারিক সংকট বা সমস্যার কারণে সৃষ্ট অশান্তি, স্বামীর পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা (প্রায় সব পুরুষ মনে করে, মতের অমিল হলে বা স্ত্রী কোন দোষ করলে স্ত্রীকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা স্বামীর অধিকার। এতে দোষের কিছু নেই। এই মানসিকতার কারণে সে স্ত্রীকে নির্যাতন করে) ইত্যাদি যে কারণেই স্বামী স্ত্রীকে নির্যাতন করুক না কেন, স্ত্রী তা মেনে নেয় বলেই সে নির্যাতিত হয়। স্বামীর উপর নিজের আর্থিক ও সামাজিক নির্ভরশীলতার কারণে স্ত্রী নির্যাতন মেনে নেয়, প্রতিবাদ করেনা।
আমাদের দেশের অধিকাংশ নারীরা আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী নয়। তাই তারা সারাজীবন নির্ভরশীল থাকে বাবা, স্বামী, ভাই বা ছেলেদের উপর। স্বামীর অবর্তমানে মেয়েরা সবচেয়ে বেশী বিপদে পড়ে আর্থিক দৈন্যের কারণে। তাই বেশীরভাগ ক্ষেত্রে নারীরা তাদের আর্থ-সামাজিক, মূলত আর্থিক নিরাপত্তাহীনতার কারণে তাদের প্রতি সহিংসতা ও নির্যাতন মেনে নিয়ে হলেও স্বামীর সাথে থাকে।
পুরুষের প্রতি মানসিক নির্ভরশীলতাও এজন্য দায়ী। কেননা পুরুষ ছাড়া সমাজে মেয়েরা অনেকটাই পরিচয়হীন এবং সমাজে কোন মেয়ের একা টিকে থাকা সহজ নয়। বিয়ের পর স্বামীরা ধরেই নেয় যে, স্ত্রী তার সারাজীবনের সম্পত্তি। সে যাই করুক, স্ত্রী তাকে ছেড়ে যেতে পারবে না। কোথায় যাবে? তার যাবার জায়গা কই?
স্বামী নির্যাতন করলেও মেয়েদের পরিবার চায়না মেয়েরা স্বামীকে তালাক দিয়ে বাবার বাড়ী আসুক। মেয়ের (কখনও কখনও তার সন্তানদের) আর্থিক দায় তার বাবা বা ভাইরা নিতে চায়না। এমনকি মেয়েরা আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হলেও সামাজিকভাবে হেয় হবার ভয়ে ডিভোর্সি মেয়ের দায় তার পরিবার নিতে চায়না । তাই উচ্চবিত্ত ও মধ্যবিত্ত ঘরের মেয়েরাও নির্যাতন সহ্য করে স্বামীর সংসার করে, স্বামীকে ডিভোর্স দেয়না। নিম্নবিত্তঘরের মেয়েদের অবস্থা সবচেয়ে শোচনীয়। নিম্নবিত্ত পরিবারে স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকেরা নানাভাবে স্ত্রীদের নির্যাতন করে মূলতঃ যৌতুক আদায়ের জন্য। তারা যৌতুক দিতে না পারলে এবং নিজেরাও আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী না হলে বাধ্য হয়ে নির্যাতন সহ্য করে স্বামীর সাথে থাকে।
মেয়েদের আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী না হবার কারণ কী?
মেয়েদের আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী না হবার কারণ বহুবিধ। যেমন – স্বামীরা সাধারণত বেকার স্ত্রীদের হাতে টাকা দেয়না। স্ত্রীর বাপের দেয়া অর্থ-সম্পদও কেড়ে নেয়। মেয়েদেরকে সবসময় আর্থিক দিক থেকে বঞ্চিত করা হয়। বাবার সম্পত্তি, বিধবা হলে স্বামীর সম্পত্তি ঠিকমত দেয়া হয়না। এমনকি, দেনমোহরটাও দেয়া হয়না।
বেশীরভাগ স্বামী নিজের স্ত্রীর সম্পদ বা আয় নিজের মনে করে এবং জোর করে তা নিজের করায়ত্তে রাখে। স্ত্রীর উপার্জনে স্বামীর কোন হক নেই বা স্ত্রী স্বেচ্ছায় না দিলে সেটা সে নিতে পারেনা, এটা স্বামীরা মানেনা। ফলে উপার্জনক্ষম নারীরাও নিজের আয় ইচ্ছামত ব্যয় বা সঞ্চয় করতে পারে না। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর নীলুফার সুলতানার এক গবেষণায় পাওয়া গেছে, এ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষিকা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, তাঁর বেতন তিনি নিজে তুলতে পারেন না। চেক সই করে দেন, তাঁর স্বামী টাকা তোলেন। তাঁর একাউন্টে কত টাকা আছে তা তিনি জানেন না। টাকা দিতে না চাইলে স্বামী তাঁকে নির্যাতন করে।
নারীর আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হতে না পারার কারণ হলো – পরিবারের অসহযোগিতার কারণে শিক্ষায় মেয়েদের অনগ্রসরতা, মেয়েদের সংকীর্ণ চিন্তা-চেতনা ও দূরদর্শিতার অভাব, কিছু করার জন্য আত্মবিশ্বাস, চেষ্টা ও মনোবলের অভাব, পরিবারের সনাতন দৃষ্টিভঙ্গীর কারণে মেয়েদের কাজ করার ক্ষেত্রে পারিবারিক সম্মতি না পাওয়া, কর্মসংস্থানের অভাব ও সুষ্ঠু কাজের বা ব্যবসার পরিবেশের অভাব ইত্যাদি। এসব ছাড়া কোনকিছু করে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হবার ক্ষেত্রে নারীদের কাছে সবচেয়ে বড় বাধা হলো তার দারিদ্র।পুঁজির অভাবে তারা কিছু করতে পারেনা। বাংলাদেশে শতকরা ত্রিশ ভাগ নারী শিক্ষিত। শিক্ষার অভাবে তারা নিজেদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন হতে পারেনা। তারা বোঝেনা যে তারা হজম করে বলেই পুরুষরা তাদের উপরে নির্যাতন করে আরাম পায়।
স্বামীর নির্যাতন থেকে বেরিয়ে আসার উপায় কী?
আমরা জানি, আর্থিক স্বাবলম্বিতা যেকোন নারীকে পরনির্ভরশীলতা থেকে বাঁচায়। নারী আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হলে পরিবারে-সমাজে সে নিজেকে অনেকটাই নিরাপদ করতে পারে, শারীরিক-মানসিক নির্যাতন থেকে নিজেকে (সন্তানদেরকেও) বাঁচাতে পারে। পরিবারে, সমাজে তার সম্মান বাড়ে, তার মানসিক শক্তি বাড়ে। তাই শিক্ষিত মেয়েদের উচিত, চাকরী, ব্যবসা বা যেকোন কাজ করে নিজেদেরকে স্বাবলম্বী করা। উচ্চবিত্ত ও মধ্যবিত্ত ঘরের মেয়েদের জন্য পুঁজি জোগাড় করে কিছু করা খুব সহজ। শুধু সদিচ্ছা, চেষ্টা ও কঠোর মনোবল থাকলেই হলো।
আমি ভারতে একটি মন্দিরের সামনের রাস্তায় একটি ফুলের দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে হতবাক হয়ে গেছিলাম। আমি দেখলাম, এক মধ্যবয়সী নারী, যার একটি পা হাঁটু পর্যন্ত কাটা, ফলস পা লাগানো। সেই নারী ভেসপা মোটরসাইকেল চালিয়ে এলো ফুল নিয়ে। ঐ পা নিয়েই সে এই ফুলের দোকান চালিয়ে তার সংসার চালায়। আর আমরা সুস্থ মেয়েরা বসে বসে খাই, মোটা হই, পরচর্চা করি আর ভারতীয় সিরিয়াল দেখি। আজব!!!
আমাদের মূল সমস্যা হলো আমরা সাধ্য থাকার পরেও কিছু করতে চাইনা। আমাদের আত্মসম্মানবোধ নেই, আমাদের আত্মবিশ্বাস ও নেই। আমরা মানতে চাইনা যে, শুধু টাকা আয় করার জন্যই কাজ করা জরুরী নয়, নিজের শখ বা আত্মমর্যাদা অক্ষুন্ন রাখার জন্য ও কিছু করা দরকার। সৌরভ গাঙ্গুলীর বৌ নাচের স্কুল চালায়, শচীনের বউ ডাক্তার। অভিনয় ছেড়ে দেবার পর শিল্পা শেঠী চালায় ব্যায়ামাগার, মাধুরী দীক্ষিত চালায় নাচের স্কুল। কেন তারা কাজ করে? টাকার অভাবে? বাড়ীতে বসে বসে খেতে কি তাদের কোন অসুবিধা ছিল?
আমার পরিচিত কিছু মেয়েদের দেখে আমার ভাল লাগে। তাঁরা নিজেদের সাধ্য ও পছন্দ অনুসারে কিছু কাজ করে সম্মানের সাথে টাকা আয় করছে। যেমন –
এক বেকার ভাবী, চারুকলা থেকে পাস করা। তিনি বাসায় স্কুলের বাচ্চাদের আর্ট শেখান। জামা, শাড়ী, চাদর, পিলো এসবে হাতের কাজ করে বিক্রি করেন। নানা জিনিস যেমন সুন্দর নক্সা করা আয়না, কাঠের শোপিচ ইত্যাদি তৈরী করেন। এতে চাকরীর চেয়ে অনেক বেশী টাকা তিনি বাসায় বসেই আয় করেন।
আরেক ভাবী হাতের কাজের জিনিস বানাতে বা সেলাই করতে পারেন না। তিনি কিছুটা প্রত্যন্ত এলাকার বুটিকের দোকানগুলো থেকে কম দামে চাদর, কাঁথা, থ্রিপিচ, শাড়ী এসব কিনে এনে কিছু লাভ রেখে বিক্রি করেন। এখন এটাই তার পেশা। কখনও কখনও কাপড়ের অর্ডার নিয়ে বুটিকের মেয়েদেরকে দিয়ে কাজ করিয়ে বিক্রি করেন।
এক ডিভোর্সি মেয়ে, একটি ছেলে আছে। বাবার বাড়ীতে আশ্রিতা। তেমন লেখাপড়াও জানেনা। ঢাকায় খালার বাড়ীতে থেকে বিউটিশিয়ানের ট্রেনিং নিয়ে এলো। বাড়ীতেই একটা ঘর ফাঁকা করে পার্লার শুরু করলো। এখন পুরো পরিবারের খরচ সে নিজেই চালায়।
বড়লোকের এক মেয়ে ডিভোর্সের পর বাবার কাছ থেকে টাকা নিয়ে একটি দোকান ভাড়া নিয়েছে। সেখানে সে শুধুই মেয়েদের জিনিস বিক্রি করে। এটি এখন তার সময় কাটানোর মাধ্যম। চাকরীর বিকল্প ও বটে।
তিনজন গৃহবধূ মিলে একটা কফিশপ খুলেছে। এটি এখন যেমন তাদের আয়ের উৎস, তেমনি তাদের আত্মবিশ্বাসেরও প্রতীক।
হতদরিদ্র এক গ্রামের ডিভোর্সি এক মেয়ে। তিন বছরের এক মেয়ে নিয়ে এসে উঠলো বাবার বাড়ি। বাবা মারা গেছেন। তাই ভায়েদের সংসারে সে তখন বোঝা। সেলাই শিখলো তিনমাস কষ্ট করে। গলার চেন বেঁচে কিনলো সেলাই মেশিন। গ্রামেই সে ভালো আয় করছিল লোকের কাপড় সেলাই করেই। এখন সে ঢাকায় একটা গার্মেন্টসে কাজ করে মাসে তিরিশ হাজার টাকা আয় করে।
এক মহিলা পুঁথির ব্যাগ, শোপিচ, পাপোষ ইত্যাদি বানিয়ে দোকানে দোকানে বিক্রি করে। এটাই তার বেঁচে থাকার অবলম্বন।
এক ভাবীর বাবার বাড়ী নবাবগঞ্জ। সেখান থেকে কম দামে নক্সী কাঁথা আর চাদর বানিয়ে এনে সিল্কের শাড়ীর দোকানগুলোতে একটু বেশী দামে সাপ্লায় দেয়। আরেক ভাবীর বাবার বাড়ী টাঙ্গাইলে। সেখান থেকে কম দামে সুন্দর সুন্দর শাড়ী কিনে এনে তাতে সে হাতের কাজ করে বা করায়। তারপর বেশী দামে বেচে। এটাই তার আয়ের উৎস।
একটি মেয়ে শুধু কুরুশ কাঁটার কাজ জানে। সে কুরুশ কাঁটার টোবিলক্লথ, পিলো বানিয়ে বেচে। কখনও ওড়না, শাড়ী, চাদর বা পিলোর চারদিকে সে লেস বানিয়ে বিভিন্ন বুটিক শপে দেয়। তাতেই তার সংসারের খরচ দিব্বি চলে যায়।
টিভিতে দেখলাম, ঢাকার এক শিক্ষিত বিদেশ ফেরত ছেলে ভ্যানে করে গেঞ্জি, শার্ট, প্যান্ট বিক্রি করছে। খিচুড়ি (জগা খিচুড়ি) বিক্রি করছে। এতেই এখন তার দিব্বি চলে যায়। এটিই তার পেশা।
এক ভাবী বাড়ীতেই তাঁর দুই মেয়েকে গান শেখাতেন। বাচ্চাদের বন্ধুরা দু’একজন করে আসতে আসতে এখন একটা গানের স্কুল গড়ে উঠেছে। আর এক ভাবীর স্বামী দূর্ঘটনায় পঙ্গু হলেন। তখন সংসার চালানোর জন্য তিনি নিজের বাসায় বাচ্চাদের প্রাইভেট পড়াতেন। এখন পাড়ার সব প্রাইমারীর বাচ্চারা তার কাছে পড়ে। এই করেই এখন তার সংসার চলে।
ভারতের দুই গরীর শিক্ষিত বেকার বন্ধু তার বাড়ী থেকে বেশ কিছুটা দূরে পাহাড়ের উপরে তৈরী করল একটি ট্যুরিস্ট স্পট। পাহাড়ের মাটি কেটে বানালো পাহাড়ের উপরে ওঠার সিঁড়ি। পাহাড়ের মাথার মাটি কেটে সমতল করে সেখানে বানালো হোটেল। এখন সেখান থেকে তাদের আয় হয় অবিশ্বাস্য পরিমাণে। আজাদ প্রডাক্টসের মালিক একসময় ঢাকার রাস্তায় পোস্টার বেচতেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক গভর্ণর হাটে দুধ বেচে পড়ার খরচ চালাতেন। এমন হাজার গল্প আছে। তাই চেষ্টা থাকলে কিছু না কিছু করে টাকা আয় সম্ভব।
এক মহিলা তার বাচ্চাকে স্কুলে দিয়ে বসে থাকে ৩/৪ ঘণ্টা। অন্য বাচ্চাদের মায়েদের সাথে গল্প করা ছাড়া কোন কাজ নেই। বসে বসে তার বিরক্ত লাগতো। অনেক মায়েরা বসে বসে শাড়ী বা জামাতে হাতের কাজ করতো। তাই দেখে সে বুটিক হাউস থেকে হাতের কাজ করা ব্লাউজ, শাড়ী, থ্রিপিচ, টেবিল ক্লথ, পিলো ইত্যাদি কিনে ব্যাগে করে নিয়ে স্কুলে আসতো। এক নিমেষে তার সব জিনিস বিক্রি হয়ে যেত। আরো জিনিসের অর্ডার পেত। আমি নিজেও তার কাছ থেকে জামা কিনেছি। এখন এটাই তার ব্যবসা।
আরেক আপা মেশিনে এমব্রয়ডারির কাজ করেন। বিশেষ করে বোরখায় কাজ। একজন শুধু মাটির গহনা বানিয়ে বিক্রি করেন। আমার এক বান্ধবী শাড়ী, জামা, পাঞ্জাবী, শার্টে শুধু ব্লকের কাজ করে বিক্রি করে।
আরেক মেয়েকে দেখলাম, হাতের কাজের প্রতিটা শাড়ীর সাথে ম্যাচিং রেডিমেড কাজ করা ব্লাউজ, মাটির গহনা, চুড়ি, খোঁপার ব্যান্ড, ব্যাগ ইত্যাদি একসাথে বক্রি করেন। এই দোকানে মেয়েদের খুব ভীড়। তার কারণ, এখানে যেকোন অনুষ্ঠানের উপযোগী আনকমন নানা শাড়ী ও গহনা একসাথে পাওয়া যায়। একই রকম শুধু সালোয়ার কামিজের আরেকটি দোকান করার কথা সে ভাবছে। মেয়েদের জিন্স, গেঞ্জি, ধূতি পাজামা, ঘাগড়া, পার্টি ড্রেসও থাকবে ম্যাচিং গহনাসহ।
এক ভাবী বাসার পিছনের ফাঁকা জায়গায় ও ছাদে মিনি নার্সারী করেছেন। সেখানে তিনি শুধু ইনডোর প্লান্ট লাগান। বিশেষ করে ঝুলানো টবের গাছ আর কিছু অর্কিড। মোবাইলে সেসব গাছের ছবি তুলে নিয়ে গিয়ে তার পরিচিত মানুষদের দেখান। ছবি দেখে পছন্দ করলে তিনি তাঁর পরিচিত মানুষদের কাছে গাছ বিক্রি করেন। কখনও পরিচিতরা এসে গাছ নিয়ে যায়, কখনও কেউ বললে উনি নিজেও তাদের বাসায় গিয়ে গাছ দিয়ে আসেন। ক্রেতাকে যাওয়া আসার ভাড়া দিতে হয়। কখনও কখনও তিনি যান স্কুলে, দোকানে বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে যারা গাছ কেনে। এই কাজ তাঁকে আনন্দ যেমন দেয়, তেমনি দেয় আর্থিক লাভও। এই কাজে তাঁর সবচেয়ে বড় লাভ হয়েছে যা তা হলো, তার বাচ্চারাও অবসরে গাছের যত্ন করা শিখে গেছে। এখন এটা তাদেরও ভালবাসার কাজ। এখন তাঁর গোটা বাড়ীই একটা বাগান। বেডরুম, বারান্দা, টয়লেট, কিচেন, বাড়ীর এমন কোন জায়গা নেই যেখানে সুন্দর সুন্দর গাছ নেই। আমরা জানি, গাছ এখন ইন্টিরিয়র ডিজাইনারদের কাছে একটি অপরিহার্য জিনিস। বড় বড় হোটেলগুলোতে, বিশেষ করে ফাইভ স্টার হোটেল ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোতে গাছ ও অর্কিড রাখা হয় সৌন্দর্য্য বৃদ্ধির জন্য। তাই এটিও হতে পারে মেয়েদের বা যেকারো আয়ের উৎস।
এখন অনলাইন শপিং এর ব্যবসারও প্রসার ঘটছে। আপনার চেষ্টা ও যোগ্যতা থাকলে অনেক কিছুই করা সম্ভব। আমার প্রতিজ্ঞা ছিল, ভার্সিটিতে চাকরী না পেলে আমি হাতের কাজের ও গাছের ব্যবসা করব। এখনও মনে হয়, সময় থাকলে এগুলোও করতাম। আগ্রহী ছেলেমেয়েদেরকে হাতের কাজ, বাগান করা শেখাতাম যাতে তারা নিজেরাই কিছু করতে পারে। লেখালেখি করেও সমাজের জন্য কিছু করা যায় যা আপনার মনের খোরাক দেয়।
রাজশাহীতে এখন অনেক দোকানে, রেস্টুরেন্টে নারী ব্যবসায়ী দেখি। দেখে ভাল লাগে। আড়ংসহ ঢাকার বড় বড় ফ্যাশান হাউস ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো নানা জায়গা থেকে কম দামে জিনিস কিনে নিজেদের প্রতিষ্ঠানের ট্যাগ লাগিয়ে তিন-চারগুণ দামে বিক্রি করে। আমার মনে হয়, সদিচ্ছা থাকলে ও নিজের পরিশ্রম ও সৃজনশীলতা কাজে লাগিয়ে কোন না কোন সৎকাজ করে নিজের ভাগ্য পরিবর্তন করা যায়। তার সবচেয়ে বড় প্রমাণ আমাদের দেশের অল্পশিক্ষিত হতদরিদ্র গ্রামের মেয়েগুলো যারা দেশের পোশাক কারখানাগুলোতে কাজ করে নিজের ও পরিবারের ভাগ্য বদলাচ্ছে।
আমাদের মেয়েরা, এমন কি শিক্ষিত মেয়েরাও চাকরী না পেলে বিয়ের পর আর কিছুই করতে চায়না। এই না করা তাদের মর্যাদা হানি করে। প্রতিটা মানুষের নিজের, পরিবারের, আত্মীয়দের, সমাজের ও দেশের জন্য কিছু করা উচিত। এটি ছেলেমেয়েদের কাছে মেয়েদের মর্যাদা বাড়ায়, নির্যাতন কমায়। গ্রামে-গঞ্জেও এখন পার্লার, বুটিক শপগুলোতে কাজ করে মেয়েরা স্বাবলম্বী হচ্ছে। পৃথিবীর ধনী ও উন্নত দেশগুলোতে কোন মেয়ে বেকার বসে থাকেনা। আমাদের দেখেই আমাদের সন্তানেরা সৎপথে থেকে পরিশ্রম করতে শিখবে। ওদের সামনে আদর্শ হোন। ওরা আপনাকে শ্রদ্ধা করতে শিখুক।