৯০০ বার পঠিত
পূর্ববর্তী পোস্টে হিন্দুত্ববাদীদের প্রচারিত ইতিহাসের মিথ্যাচার তুলে ধরেছি। একজন সৃজনশীল লেখকের কাজ এসব নয়। কিন্তু আমাদের পণ্ডিত, গবেষক, বুদ্ধিজীবী ও রাজনীতিবিদরা নিশ্চুপে সব মেনে চলায় আমাকে অগত্যা এই প্রসঙ্গে লিখতে হয়েছে। তাদের নানা ধরনের হারানোর ভয় থাকতে পারে। তারা নিশ্চুপ থাকেন হয়তো সেই কারণেই। কিন্তু আমাদের দেশ ও জাতিকে যেসব মিথ্যা অপবাদের বোঝা বইতে হচ্ছে, সেই অভিশাপ থেকে জাতিকে উদ্ধারের পক্ষে ডাক দেয়ার দায়িত্ব কাউকে না কাউকে নিতে হবেই। যেহেতু আমার কিছু পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা এবং হারানোর ভয় নেই, তাই যাকে সত্য বলে জানি তা প্রকাশ করাটা নৈতিক দায়িত্ব বলে মনে করি।
আমার দুই কিস্তি লেখার কোনো যুক্তিযুক্ত উত্তর হিন্দুত্ববাদীরা দিতে পারেননি। পারার কথাও নয়। কারণ আমি যা লিখেছি তা সত্যের মাপকাঠিতে উত্তীর্ণ। তখন সেই চিরাচরিত পথে হেঁটেছেন হিন্দুত্ববাদীদের দল। গালিগালাজ করার পথ। আমাকে নানা ধরনের ট্যাগ দেওয়ার পথ। তারা এসেছেন দলবেঁধে। সুষুপ্ত পাঠক এবং রামকৃষ্ণ ভট্টাচার্য সান্যাল (ব্লগার ঘনাদা) তাদের স্বর্গবেশ্যা এবং গেলমানদের সাথে নিয়ে নেমেছেন আমাকে গালমন্দ করার আসরে। এটি তাদের বৈশিষ্ট্য। তাদের আরেকটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে নাস্তিকতার ছদ্মাবরণে মূলত মুসলমান এবং ইসলাম ধর্মকে গালাগালি করা। তারা নাস্তিকতা ও বিজ্ঞানমনস্কতা প্রচার করলে সেটি আমার কাছে মোটেই দোষণীয় হতো না। কিন্তু তা না করে একটি বিশেষ ধর্মের অনুসারীদের টার্গেট করে প্রপাগান্ডা চালানোকে আমি মনে করি সেই ধর্মের মধ্যকার মৌলবাদীদেরকে আরো উস্কে দেওয়া। এই উস্কে দেওয়ার প্রবণতার কারণেই আমাদের স্বাধীনতার চেতনা পুনঃপ্রতিষ্ঠার শাহবাগ আন্দোলনের বিরুদ্ধে জামাত-বিএনপি-জাতীয় পার্টি এবং সরকারি দলের মধ্যকার মৌলবাদী অংশের ছত্রছায়ায় গড়ে উঠতে পেরেছিল হেফাজতি প্রতিবিপ্লব। এদের লেখালেখি অসাম্প্রদায়িক শাহবাগ আন্দোলনকে ইসলামের বিপক্ষের আন্দোলন হিসাবে পরিচিত করাতে যথেষ্ট সাহায্য করেছে মৌলবাদীদের।
সেই তারা এবং তাদের পরিবেষ্টিত গেলমানের দল এখন আমাকে গালাগালির প্রতিযোগিতাতে নেমেছে। সাথে যোগ দিয়েছে এদেশের কিছু সাম্প্রদায়িক ফেসবুকার। সচরাচর আমি এইসব লোকের কমেন্টের কোনো উত্তর দিতে চাই না। বেশি নোংরামি দেখলে ব্লক করে দিই। আমি একলা মানুষ। কোনো দল-উপদলের সাথে যুক্ত নই। ফেসবুকে বা বাইরে আমার কোনো অনুসারী দল নেই। তাই একা একা সবগুলোর উত্তর দিতে গেলে অনেকখানি সময় নষ্ট হয়ে যাবে বলে এড়িয়ে যাই। তদুপরি যার-তার সাথে বিতর্কে জড়ানোতে আমার অরুচি হয়। কারণ কমেন্ট দেখেই বোঝা যায় এদের কোনো প্রাথমিক ধারণাও নেই বাজার অর্থনীতি সম্বন্ধে, সাহিত্যের পণ্যায়ন সম্বন্ধে, সমাজ প্রগতির আন্দোলন সম্বন্ধে। আর এদের সাহিত্যপাঠের গণ্ডি নিরতিশয় সীমিত। তাই সাহিত্যে নিবেদিত লেখক এবং বাজারচলতি লেখকের পার্থক্যও এরা বোঝে না।
সুষুপ্ত পাঠক জানতে চেয়েছেন আমি সংখ্যালঘুদের সম্পত্তি জবরদখল নিয়ে কোনো কিছু লিখেছি কি না। প্রশ্ন করার ভঙ্গির মধ্যেই এমন একটি ভাব রয়েছে যে তিনি নিশ্চিত, আমি সে ধরনের কিছু লিখতেই পারি না। আমার পাঠকরা জানেন যে আমি ওদের লেখালেখি শুরুর আগেই ওসব নিয়ে লিখেছি। ‘শত্রু সম্পত্তি’ নামে আমার একটি বহুলপঠিত গল্প আছে। ‘হাঁটতে থাকা মানু্ষের গান’ নামে আমার একটি উপন্যাস আছে যা এই বিষয়টিকে ধারণ করেছে। আমার বই বেশি বিক্রি হয় না। তবু এই বইটির তিনটি সংস্করণ হয়েছে।
এক আদিবাসী জানতে চেয়েছেন আমি আদিবাসীদের নিয়ে লিখেছি কি না। ‘কল্পনা চাকমা ও রাজার সেপাই’ নামে আমার একটি গল্পের বই আছে যার সবগুলি গল্পই আদিবাসীদের নিয়ে লেখা। সেই বইটিরও তিনটি সংস্করণ হয়েছে। একজন লিখেছেন, শীর্ষেন্দুর সমান লেখক নই বলে তাঁর প্রতি আমার ঈর্ষা। বলেছেন ‘নিজের বাল ফালাইতে না পারলে অন্যের বাল দেখেও চুলকানি লাগে’। উক্তিকারীর নাম দেখে মনে হয় তিনি চাকমা জাতির মানুষ। সম্ভবত সেই চাকমাদের একজন যারা কিছুদিন আগে ত্রিপুরাতে সমাবেশ করে পার্বত্য চট্টগ্রামকে ভারতের অংশ বলে দাবি করেছিল। তিনি লিখেছেন– আমি শীর্ষেন্দুর ‘দূরবীন’ উপন্যাসের মতো কিছু লিখতে পারব কি না’। গাধার মতো প্রশ্ন। আমি শীর্ষেন্দুর দূরবীনের মতো কিছু লিখতে যাব কেন? পারবই বা কেন? যেমন শীর্ষেন্দু পারবেন না জাকির তালুকদারের ‘পিতৃগণ’ উপন্যাসের মতো কিছু লিখতে। অনেকেই আমাকে বলেছেন ‘বালের লেখক’। আমি তাদেরকে ‘বালের পাঠক’ বলে অপমানিত করতে চাই না।
তবে আমার ফেসবুক এবং ফেসবুকের বাইরের বন্ধুদের অনুরোধ জানাই, ইংরেজ এবং পরবর্তীতে হিন্দুত্ববাদী পণ্ডিত এবং ইতিহাসবিদরা আমাদের বাংলাদেশের মানুষের ওপর যেসব মিথ্যা অপবাদ চাপিয়ে গেছে, এবং গোয়েবলস-এর কায়দায় সেগুলো প্রচার করে চলেছে, এখন সময় এসেছে সত্য ইতিহাস এবং সত্য বিশ্লেষণ দিয়ে সেগুলোকে প্রত্যাখ্যান করার। নইলে আমাদের জাতিগত সম্মান হুমকির মুখে থাকবে।
তিরিশ লক্ষ শহীদের আত্মা আমাদের আলোর দিশারী হোক!
ই-মেইলে যোগাযোগ করুন