ভাষা কি? একটা সেতু– সাঁকো! একে অপরের কাছে পৌঁছানোর। নিজেকে অপরের কাছে প্রকাশ করার এবং পৌঁছে দেওয়ার মাধ্যম। প্রতিবাদ, প্রেম- ভালোবাসা প্রকাশের উপযুক্ত মাধ্যম। শতাব্দীর পর শতাব্দী জুড়ে গড়ে ওঠে একটি ভাষার বিকাশ। একটা প্রবাহমান প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সেই ভাষার ব্যবহারের ক্ষেত্রটি প্রসারিত হয়ে সেটি জাতির ঐতিহ্য হয়ে ওঠে। ভাষাকে কেন্দ্র করে তৈরি হয় একটা সমাজের সংস্কৃতি, ভালোলাগা মন্দলাগার অনুভূতি। ভাষা তাই ‘মা’। ভাষা তাই বাবা, ঘর, পরিবার, সমাজ। বহু বহু বছরের ইতিহাস, সংস্কৃতি, সমাজ এবং ঐতিহ্য আবহমান কালের দিকে গড়ায় ভাষাকে কেন্দ্র করে। তৈরি হয় জনজাতির নিজস্ব কৃষ্টি ও সংস্কৃতি। নিজস্ব ভাব এবং ভাবনাকে প্রকাশ করে ভাষার মাধ্যমে। কিন্তু এখন এই সীমারেখা এবং গণ্ডীবদ্ধ জীবন থেকে মানুষ বেরিয়ে এসেছে। বিশ্বের দিকে তার চোখ। সে চোখ শুধু লাভ দেখে, প্রতিপত্তি দেখে। আর তাই অপেক্ষাকৃত সংখ্যালঘু ভাষাগোষ্ঠীকে গ্রাস করে নিচ্ছে বিশ্বায়নের করাল ছায়া। গিলে ফেলছে যেন। হারিয়ে যাচ্ছে বহু ভাষা, তার সাহিত্য, সংস্কৃতি। সময়ের নিয়ম বলে সবাই আমরা মেনে নিতেও শিখে গেছি। আর এই হারিয়ে যাওয়া তালিকায় ঢুকে পড়ছে আমাদের বাংলা ভাষা। ঢুকে পড়েছে বলা যেতে পারে। হিন্দি এবং ইংরেজি ভাষার সঙ্গে প্রতিনিয়ত লড়তে লড়তে আজ তার অবস্থা সঙ্গিন। এর জন্য দায়ী কে, সে উত্তর না খুঁজে একমাত্র সচেতনতাই এবং বাংলা ভাষার প্রতি বাঙালির ভালোবাসা ও শ্রদ্ধাই যে একমাত্র বাঁচিয়ে রাখতে পারে এই ভাষাটিকে সে বিষয়ে সন্দেহ নেই।
পশ্চিমবঙ্গের প্রতিবেশী রাজ্য ঝাড়খণ্ড। কিন্তু প্রতিবেশী শুধু না বলে বরং বলা ভালো ঝাড়খণ্ড রাজ্যটির মনে প্রাণে যাপনে আছে বাংলা ভাষার প্রতি তার অন্তরের শ্রদ্ধা ও নৈকট্য বোধ। এই রাজ্যের জনসংখ্যার একটা বড় অংশ বাংলা ভাষাভাষী মানুষ। এখানকার লোকসংস্কৃতি বিশেষ করে লোকগানগুলি রচিত এই বাংলা ভাষার সাহায্যে। যদিও কলকাতার কথ্য ভাষার থেকে কিংবা আধুনিক সাহিত্য ভাষার থেকে এই ঝাড়খণ্ডী বাংলা ভাষার পার্থক্য অনেকটাই কিন্তু লিপি তো একই। হয়ত হৃদয়ের টানে কিংবা বংশপরম্পরায় ঝাড়খণ্ডী লোকগান কিংবা লোকসাহিত্য বাংলা ভাষা এবং লিপির সাহায্য নিয়েই গড়ে উঠেছে। কেননা, বর্তমানে ভারতবর্ষের যে অংশটিকে আমরা ঝাড়খণ্ড রাজ্য নামে চিনি এটি আগে ছিল গৌড়বঙ্গ বা বৃহৎ বঙ্গের অংশ। বাংলার সংস্কৃতি, বাংলা ভাষাও ছিল এদের নিজস্ব মাতৃভাষা ( এখনও অবশ্য তাই আছে)। বাংলাতে কথা বলেছে, কবিতা লিখেছে। এই ভাষাতেই ভাবতে শিখেছে। সাহিত্য রচিত হচ্ছে। নিজেকে বাঙালি ভেবে মানভূম বিদ্রোহে লিখিয়েছে নিজেদের নাম। শহিদ হয়েছে, রক্ত স্রোতে ভাসিয়েছে নিজেদের বাংলা ভাষার জন্য দুঃখ-ক্ষোভ-ভালোবাসা।
এখানকার বেশিরভাগ মানুষ, এমনকি এখানকার মূল অধিবাসী সাঁওতাল, হো, মুন্ডা প্রভৃতি জনজাতিদের ভাব আদানপ্রদানের, লোকগান রচনার ক্ষেত্রে ভাষা হিসেবে বেছে নিয়েছেন এই আঞ্চলিক বাংলা ভাষাকেই। পূর্ব ও পশ্চিম সিংভূম, সেরাইকেলা, পটকা- পটমদা, পাকুর, সাহেবগঞ্জ, ধানবাদ প্রভৃতি জেলার প্রায় ৮০℅–এর উপর বাংলা ভাষাভাষী মানুষজনের বাস।
যখন ২০০০ সালের নভেম্বর মাসে বিহার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে এই নতুন রাজ্যটি ঝাড়খণ্ড নামে তৈরি হল, তখন এখানকার জনজাতিদের মনে ক্ষীণ হলেও আশা ছিল বাংলা ভাষাটি এবার যথাযোগ্য সম্মান পাবে। কিছু না হলেও স্কুলে পঠনপাঠন, বাংলা ভাষা শেখানো এবং চাকরির ক্ষেত্রে বাংলা শিক্ষক নিয়োগ করা হবে।
ইতিহাসে দেখা যায় ১৯০৮ সালে যখন জামশেদজি টাটা টাটা কোম্পানির গোড়াপত্তন করেন সাকচি গ্রামে, তখন এই সমস্ত পরগনা ছিল বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির অধীন। প্রাক স্বাধীনতাকালে বিভিন্ন রকম ভাষা নিয়ে প্রদেশ গঠনের পরিকল্পনা নেওয়া হয় বটে কিন্তু রাজনৈতিক কূটচালে সেসব বাস্তবে পরিণত হয়নি। ফলস্বরূপ যা হয়, দক্ষিণ বিহারের বাংলাভাষী সমস্ত অঞ্চলগুলোকে বিহার প্রদেশের অন্তর্ভুক্ত করে দেওয়া হয়। ১৯৪৭ সালে ভারত স্বাধীনতা লাভ করার পর থেকে জাতীয় কংগ্রেসের ভাষাভিত্তিক রাজ্য পুনর্গঠনের নীতির বাস্তব রূপায়নের দাবিতে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে আঞ্চলিকতা বেড়ে উঠতে শুরু করে, আন্দোলন শুরু হয়। তৎকালীন বিহার সরকার ঐ রাজ্যের মানুষদের ওপর হিন্দি ভাষা চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। প্রাথমিক স্তরে ও সরকারি অনুদানযুক্ত বিদ্যালয়ে হিন্দি মাধ্যমে পড়ানোর নির্দেশ আসে। জেলা স্কুলগুলিতে বাংলা বিভাগ বন্ধ করে দেওয়া হয় ও হিন্দিকে বিহার রাজ্যের আনুষ্ঠানিক ভাষা হিসেবে ঘোষণা করা হয়। বিহার সরকার বাংলাভাষীদের প্রতিবাদসভা ও মিছিল নিষিদ্ধ করলে মানভূম জেলায় আন্দোলন তীব্র হয়ে ওঠে। লোক সেবক সংঘ ১৯৪৯ থেকে ১৯৫১ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত সত্যাগ্রহ আন্দোলন এবং ১৯৫৪ খ্রিষ্টাব্দের ৯ই জানুয়ারি থেকে ৮ই ফেব্রুয়ারি টুসু সত্যাগ্রহ আন্দোলন করে। ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি এ আন্দোলনে সক্রিয় ভাবে যোগদান করে। হাজার হাজার বাংলাভাষী মানুষ কারাবরণ করে। এই অঞ্চলের লোককবিরা বাংলাতে কবিতা রচনা করেন, গান বাঁধেন। ঝুমুর গান ও নাচের মাধ্যমে আন্দোলনকে সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দেন।
১৯৫৫ সালে লোকসেবক সংঘের তীব্র প্রতিবাদকে সরকার উপেক্ষা করে। পেশ করা হয় ভুল মানচিত্র, ভুল তথ্য। কিন্তু সরকারি নীতি অনুযায়ী ধলভূম অঞ্চলকে বিহারের অন্তর্গত করা হলেও শিক্ষাব্যবস্থা, সরকারি দস্তাবেজ, দলিল পত্র সব বাংলা ভাষাতেই লেখা হত। দক্ষিণ বিহারের শাসনব্যবস্থা বাংলাতে রাখার সিদ্ধান্ত বিহার সরকার মেনে নিয়েছিল। এমনকী বিহার বিধানসভাতে বাংলা ভাষায় সওয়াল জবাব চালু ছিল। ১৯৬৮ সাল পর্যন্ত এই প্রথা চলে। তারপরেও বিহার সরকার বাংলাভাষাকে মর্যাদা দিয়ে চলত। বাংলা মাধ্যমের স্কুলগুলিকে সরকার সুচারুরূপে পরিচালনা করেছে। বাংলা বইপত্রের যোগান দেওয়া হয়েছে নিয়মিত। আবার শিক্ষক নিয়োগ, চাকরি ব্যবস্থার ক্ষেত্রে বাংলা জানা ব্যক্তিদের কোনও অসুবিধা সৃষ্টি হতে দেয়নি। ঝাড়খণ্ড অঞ্চল যখন বিহারে ছিল বাংলা ভাষার অবস্থা খুব ভালো ছিল। কিন্তু দক্ষিণ বিহারের এই অংশ ১৪ নভেম্বর ২০০০ সালে ঝাড়খণ্ড নামে একটি আলাদা রাজ্য বলে ঘোষিত হল, তখন থেকেই বাংলা ভাষা হল কোণঠাসা। স্লো পয়জন নীতি গ্রহণ করল সরকার। বন্ধ করা হল বাংলা মিডিয়াম স্কুল। অনুভূত হল বাংলা পাঠ্যপুস্তকের অভাব। আর এই অভাব কিছুতেই সরকার চাইল না মেটাতে। ইচ্ছাকৃত ভুলকে কী আর কেউ সংশোধন করে?
যদিও বলাই বাহুল্য, ঝাড়খণ্ডের মূল সংস্কৃতিটাই বাংলা কেন্দ্রিক। বাংলা ভাষাকেই কেন্দ্র করে এই অঞ্চলের লোকসংস্কৃতি গড়ে উঠেছে। এই রাজ্যের ঝুমুর ভাদু টুসু গান, মনসামঙ্গল, বাউল, ছৌ নাচ, ষষ্ঠী গান, ঝাঁপান গান জাতি ধর্ম নির্বিশেষে জাতীয় সম্পদ। কিন্তু এগুলি আজ বাংলা ভাষা ও লিপির অভাবে হারিয়ে যেতে বসেছে। হিন্দি ভাষার চাপে পড়ে পরবর্তী প্রজন্ম ভুলে যাচ্ছে তাদের নিজস্ব ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে। হারিয়ে যাচ্ছে ঝাড়খণ্ড রাজ্য গঠনের মুখ্য উদ্দেশ্য। পৃথক রাজ্য গঠনের জন্য এখানকার জনজাতি যে ভাষার জন্য স্বপ্ন দেখেছিল, রাজনৈতিক কোন কূটচালে আজ সেটি দুঃস্বপ্নে রূপান্তরিত। ধীরে ধীরে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বাংলা পাঠ্যপুস্তক ছাপানো। বাংলা পড়তে উৎসাহী ছাত্র-ছাত্রীদের কোনও বাংলা বই দিচ্ছে না সরকার। প্রয়োজন অনুযায়ী শিক্ষক নেই, পাঠ্যপুস্তক নেই, স্কুল নেই। বাংলা মাধ্যমের বিদ্যালয়গুলিতে হিন্দি মাধ্যমে রূপান্তরিত করার পন্থা চালু হয়ে গেছে ইতিমধ্যে। এমন একটা পরিস্থিতিতে শুধুমাত্র পাঠ্যপুস্তকের অভাবে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে হাজার হাজার বাংলা মাধ্যম স্কুল।
প্রশাসকদের দৌরাত্ম্যে এবং প্রশাসনিক স্বৈরতন্ত্রে বাংলা ভাষা আজ বিপন্ন। যে ভাষায় এখানকার জনজীবন ভাবতে শিখেছে, বুঝতে শিখেছে, নিজেকে প্রকাশের মাধ্যম হিসেবে বেছে নিয়েছে এই বাংলা ভাষাটিকে, রচনা করেছে টুসু, ভাদু, করম ইত্যাদি লোকগান— সেই ভাষাটিই আজ হিন্দির দাপটে মৃতপ্রায়। স্লো পয়জন করে মেরে ফেলার যে প্রক্রিয়া চালু করা হয়েছিল বহুদিন পূর্বে এখন সেই বৃত্তটি সম্পূর্ণ হয়েছে।
রাজ্য জুড়ে বাংলা ভাষা আন্দোলনকারীদের আন্দোলনের ফলে, সরকারের তরফ থেকে বাংলা ভাষাকে দ্বিতীয় রাজ্য ভাষা রূপে স্বীকৃতি দিলেও তা স্বীকৃতিতেই থেকে গেছে। বাস্তবে তার কোনও কার্যকারিতা নেই। কোনও পদক্ষেপও নিচ্ছে না সরকার।
ঝাড়খণ্ড গঠনের পর থেকেই বাংলাকে দ্বিতীয় ভাষা করার দাবি উঠেছিল বিভিন্ন মহল থেকেই। ঝাড়খণ্ড রাজ্যটি গঠনের ফলে এখানকার জনজাতিরা ভেবেওছিলেন বাংলা এবার যথাযোগ্য মর্যাদা পাবে। স্কুলে আবার বাংলা পঠনপাঠন শুরু হবে, বাংলা পাঠ্যপুস্তক পাওয়া যাবে। রাজ্যের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চাও তদ্বির করছিল বাংলা ও সাঁওতালির জন্য। মুখ্যমন্ত্রী অর্জুন মুন্ডার সরকার কোনও ঝামেলায় না গিয়ে এক কলমের খোঁচায় জল ঢেলে দিয়েছে যাবতীয় বিতর্কে। বাঙালিদের সেই আশা কিছুটা বাস্তব রূপ পেয়েছিল বাংলাকে দ্বিতীয় ভাষারূপে মর্যাদা দেওয়ার ফলে। কিন্তু একক ভাবে নয়, এ রাজ্যে আরও ১১টি ভাষার সঙ্গে দ্বিতীয় ভাষার তালিকায় ঢোকানো হয়েছিল বাংলাকে। স্বাভাবিকভাবেই, রাজ্যের বিভিন্ন ভাষাভাষী মানুষ একে তাঁদের মাতৃভাষা প্রসারের ‘অস্ত্র’ হিসেবে দেখলেও একযোগে এক ডজন ভাষার অন্তর্ভুক্তি পুরো বিষয়টিকেই কার্যত গুরুত্বহীন করে দিয়েছে। এখন ঝাড়খণ্ডের নিজস্ব ওয়েবসাইটে গেলে দেখা যায় রাজ্যভাষা হিসেবে হিন্দি প্রথমে, দু নম্বরে ইংরেজি। এমন চলতে থাকলে দীর্ঘদিনের ঐতিহ্যসম্পন্ন বাঙালি সংস্কৃতি এবং বাংলা ভাষা ঝাড়খণ্ড থেকে মুছেই যাবে।
এই হল ঝাড়খণ্ডের প্রায় কুড়ি বছরের ইতিহাস। বাংলা ভাষার ইতিহাস। এখানকার ছেলেমেয়েরা বাংলাতে কথা বলাটাই লজ্জাকর মনে করে। ঝাড়খণ্ডে বাংলা ভাষার এই অবস্থা সম্পূর্ণ রাজনৈতিকভাবে তৈরি। কিন্তু এত কথা বলার একটাই কারণ, পশ্চিমবঙ্গে বাংলার বর্তমান অবস্থা দেখে। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে গেলে অবশ্যই ইংরেজি কিংবা অন্যান্য ভাষা শেখার প্রয়োজন কিন্তু তা বলে বাংলা ভাষাকে, বাংলা মাধ্যম স্কুলগুলোকে বন্ধ করিয়ে নয়। একজন মানুষ তো অনেক ভাষা শিখতেই পারে, ভারতের মত বহুভাষিক দেশে তা শেখাও উচিত। ইংরেজি তো বাংলার সঙ্গে সঙ্গেই এখন স্কুলে শেখানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে, কিন্তু তার জন্য বাংলা মাধ্যম স্কুল বন্ধ করে দেওয়ার কারণটি ঠিক বোধগম্য হয় না। তার মানে কি সরকার বোঝাতে চাইছেন, বাংলা শিখে লাভ নেই? নাকি বাংলা শিখলে ইংরেজি শেখা যায় না? নাকি কেন্দ্র সরকারের আগ্রাসী হিন্দি মনোভাব ঝাড়খণ্ড সরকারের মতো বাংলা সরকারের ভেতরেও চারিয়ে গেছে? অবশ্য এখন স্কুল, কলেজে প্রচুর শিক্ষকের পদ খালি। এমনও দেখা গেছে, কোনও কোনও প্রাথমিক স্কুলে একজন মাত্র শিক্ষক। তাঁর পক্ষে সমস্ত শ্রেণির ক্লাস নেওয়া কখনোই সম্ভব নয়। সেখানে বাচ্চারা মিড ডে মিল খায় আর বাড়ি চলে যায়। শিশুরা কী পড়বে! সরকারি বিভিন্ন খাতে অর্থের অপচয় তো কম হচ্ছে না! যদিও শুধু শিক্ষক নিয়োগ এবং ভাষা শিক্ষার ক্ষেত্রে অর্থের অভাবই প্রধান অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে!
এমনও দেখা যাচ্ছে বাংলা মিডিয়াম স্কুলগুলোকে ইংরেজি মিডিয়ামে রূপান্তরিত করা হচ্ছে। কেন? যদি ভাষা শেখানোটাই উদ্দেশ্য হয়, তবে অন্য একটি ভাষাকে হত্যা করে কী শেখানো যায়? শিশুটি তার মনের ভাব প্রকাশ করার ক্ষেত্রে তো নিজের মাতৃভাষাকেই বেছে নেবে তাই না?
ভাবতে অবাক লাগে, এই কলুষিত রাজনীতি, কূটনৈতিক চাল জাতির ঐতিহ্য, বিবেক, বোধ, ভাবনা সব গুলিয়ে দেওয়ার খেলায় মেতেছে। আগামী কুড়ি বছরে এমন একটা জাতি, সমাজ আসতে চলেছে যার নিজস্বতা বলে কিচ্ছুটি থাকবে না! না ভাষা, না ভাবনা, না মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, না নিজস্ব কোনও সৃষ্টি, সাহিত্য! নিজেই নিজের ভূমিতে অসহায় ক্রীতদাসের মত থাকতে হবে!